একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা: পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত
বর্তমান সময়ে করোনা নামক গজবকে কেন্দ্র করে মুসলমান নামধারী কিছু মানুষ ছোঁয়াচে
রোগের কথা সমাজে খুব প্রচার করছে। এরা ছোঁয়াচে রোগের কথা বলে পবিত্র মসজিদ উনার নামায
বন্ধের মত কাজও করে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ। তাদের এই ঈমান ধ্বংসী ফতোয়াতে বিভ্রান্ত
হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঈমান নষ্ট করছে। নাউযুবিল্লাহ। তাই মুসলমান উনাদের এ বিষয়ে কি
আক্বীদা থাকা দরকার সে বিষয়ে পবিত্র শরীয়ত কি বলে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।
ছোঁয়াচে রোগ বিষয়ে মুসলমানদের মৌলিক যে আক্বীদা রাখতে হবে:
وَقَالَ
عَفَّانُ حَدَّثَنَا سَلِيمُ بْنُ حَيَّانَ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مِينَاءَ
قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم لاَ عَدْوى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ.
হযরত আবু হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, ছফর মাসে কোন অশুভ নেই। (বুখারী শরীফ ৫৭০৭, বুখারী শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ৫৯২০, ইবনে মাজাহ ৮৬, মুসনাদে আহমদ ১৫৫৪, সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৮২৬, মুসনাদে বাযযার ৭১৪৭, মুসনাদে তয়লাসী ২০৭৩, সুনানে কুবরা নাসাঈ ৯২৩২, মুসনাদে আবু ইয়ালা ৭৯৮, সুনানে কুবরা বায়হাকী ১৪৬১৯)
হযরত সা’দ ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত,
أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ " لاَ هَامَةَ وَلاَ
عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, পেঁচা অশুভ নয়, ছোঁয়াচে রোগ নেই এবং কোন জিনিস অশুভ হওয়া ভিত্তিহীন।
(আবু দাউদ শরীফ ৩৯২১, ৩৯১৬, ৩৯১২ )
উপরোক্ত ছহীহ হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের কোন অস্তিত্ব নেই। কারন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছোঁয়াচে রোগ বলে কোন রোগ না থাকার বিষয়কে স্পষ্ট
করে দিয়েছেন। সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা মানে এটা বিশ্বাস করা রোগের নিজস্ব
ক্ষমতা আছে, নিজ ক্ষমতায় রোগ কারো উপর সংক্রমন করতে পারে। যা স্পষ্ট শিরক।
রোগ দেয়ার মালিক মহান আল্লাহ পাক। এরপরও কেউ যদি ছোঁয়াচে রোগের কথা বিশ্বাস করে সে
তাহলে এ বিষয়ে মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুৎ হয়ে পথভ্রষ্ট হিসাবে চিহিৃত হবে। কারন পবিত্র
দ্বীন ইসলাম উনার কোন একটা বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা করা হলে কেউ সেটা অস্বীকার করলে
কুফরী হবে।
ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট:
এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে,
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَنْ يَدَعَهُنَّ النَّاسُ
النِّيَاحَةُ وَالطَّعْنُ فِي الأَحْسَابِ وَالْعَدْوَى أَجْرَبَ بَعِيرٌ
فَأَجْرَبَ مِائَةَ بَعِيرٍ مَنْ أَجْرَبَ الْبَعِيرَ الأَوَّلَ وَالأَنْوَاءُ
مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ
حَسَنٌ .
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মাঝে জাহিলী
যুগের চারটি বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো (পুরোপুরি) ছাড়তে পারে না: মৃত ব্যক্তির জন্য
বিলাপ সহকারে ক্রন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, ছোঁয়াচে রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা করা, যেমন একটি উট সংক্রমিত
হলে একশ’টি উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য
করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো। নাউযুবিল্লাহ। (তিরমিযী
শরীফ ১০০১)
জাহিলী যুগের বৈশিষ্ট সমূহের একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস
রাখা। সূতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হলো, ছোঁয়াচে রোগের প্রতি
বিশ্বাস রাখা মু’মিনদের আক্বীদা না বরং জাহেলী যুগের আক্বীদা। তাই যারা আজ ছোঁয়াচে
রোগের কথা বিশ্বাস করে এবং এ আক্বীদা প্রচার করে তারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যৎবানী অনুযায়ী জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট বহন
করছে।
জাহিলী যুগের ছোঁয়াচে রোগের বদ আক্বীদা রোধ করার জন্য ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’
এই হাদীছ শরীফ উনার অবতারনা:
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই।
অর্থাৎ কোন রোগের নিজস্ব এ ক্ষমতা নেই যে, কাউকে সংক্রমণ করবে। মহান
আল্লাহ উনার তরফ থেকে রোগ আসে এর শিফাও মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়ে থাকেন। রোগের নিজস্ব
কোন ক্ষমতা নেই যে, সে কোন প্রাণীকে সংক্রমিত করবে।
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা জাহিলী যুগের সেই বিশ্বাসকে
নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, জাহিলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করতো রোগীর সংস্পর্শে
থাকলে রোগ তার নিজস্ব ক্ষমতায় অন্যের দেহে চলে আসে। অথচ রোগের সংক্রমণ করার ক্ষমতাকে
বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী বিশ্বাস। সেই কুফরী বিশ্বাসকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে
বাতিল করা হয়েছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে
কুবরা বায়হাকীতে ছোঁয়াচে রোগের আলোচনা করতে গিয়ে একটা অধ্যায়ের শিরোনামে বিষয়টা স্পষ্ট
করেছেন,
باب:
لاَ عَدْوَى عَلَى الْوَجْهِ الَّذِى كَانُوا فِى الْجَاهِلِيَّةِ يَعْتَقِدُونَهُ
مِنْ إِضَافَةِ الْفِعْلِ إِلَى غَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى
“অধ্যায়: ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই এই নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে জাহিলী যুগের মানুষের আক্বীদার
কারণে। তারা এটা গাইরুল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত
করতো।” [অর্থাৎ তাদের ধারণা ছিলো রোগ ব্যধির নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে যে কারণে কোন সুস্থ
মানুষ কোন রোগীর সংস্পর্শে গেলে সেও সংক্রমিত হবে। তাদের এ শিরকি আক্বীদা রদ করতে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টা স্পষ্ট করে
দিয়েছেন ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই] (সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড ৩৫১ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরূত লেবানন)
যে কারণে আমরা দেখতে পাই, পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা সুওয়াল জিজ্ঞাসা করেছেন যাতে আমরা এ
বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারি ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে পারি। পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
أَنَّ
أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ عَدْوى
وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَا بَالُ
إِبِلِي تَكُونُ فِي الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ فَيَأْتِي الْبَعِيرُ
الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ بَيْنَهَا فَيُجْرِبُهَا فَقَالَ فَمَنْ أَعْدَى الأَوَّلَ.
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, ছফর মাস উনার কোন অশুভ
আলামত নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন অশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু তিনি সাল্লাম! তাহলে আমার এ উটের এ অবস্থা
কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের পাল।
এমন অবস্থায় চর্মরোগাগ্রস্থ উট এসে সেগুলোর পালে ঢুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্মরোগে আক্রান্ত
করে ফেলে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে প্রথমটিকে চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে? (বুখারী শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ২২২০)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে আক্বীদা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে কোনভাবেই
ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস না করে সেটা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। কারন পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার প্রথমেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ফয়সালা মুবারক করেছেন ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’। এরপর যখন উনাকে চর্মরোগে আক্রান্ত
উটের সাথে অন্য উট রাখার কারণে তাদের মধ্যেও কিছু উটের চর্মরোগ হওয়ার বিষয়টা বলা হলো
তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘ছোঁয়াচে বলে কোন
রোগ নেই’ এটা আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম উটটি যেভাবে আক্রান্ত হয়ে এগুলোও সেভাবে হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম উট কারো সংস্পর্শ
ছাড়া যেভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্য উটও সেভাবে রোগাক্রান্ত
হয়েছে, কোন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়নি। কেননা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত
হওয়ার বিন্দুমাত্রও যদি কোন কারণ থাকতো (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) তাহলে সেটা উল্লেখ
করা হতো চর্মরোগে আক্রান্ত উট বিষয়ক সুওয়ালে। কিন্তু এ ধরনের জাহিলী আক্বীদার দরজা
বন্ধ করার জন্য স্পষ্ট করে অন্য উটগুলো কিভাবে আক্রান্ত হলো তার কারণও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে দিলেন। আর এটাই আক্বীদা ও ঈমান। এর ব্যতিক্রম
আক্বীদা রাখলে সে স্পষ্ট শিরক করবে। নাউযুবিল্লাহ।
বিগত পর্বের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আক্বীদা হচ্ছে
ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। সেই সাথে ছোঁয়াচে রোগের বিশ্বাস রাখা হচ্ছে জাহিলী যুগের
বৈশিষ্ট। কিন্তু বিভ্রান্ত বদ আক্বীদাধারী কিছুলোক স্পষ্ট দলীল থাকার পরও ছোঁয়াচে রোগ
প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন দলীলের অবতারনা করে। উল্লেখ্য, যেহেতু পবিত্র বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত দ্বারা স্পষ্ট শব্দে প্রমাণিত হচ্ছে হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ
নেই। (বুখারী শরীফ ৫৭১৭) সেক্ষেত্রে অন্য কোন রেওয়ায়েত যদি পাওয়া যায় যা আপাতদৃষ্টিতে
ব্যতিক্রম মনে হয় তাহলে ব্যতিক্রম রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা খুঁজতে ও বুঝতে হবে। সরাসরি
এসকল রেওয়ায়েত দেখে ছোঁয়াচে রোগ আছে এমন কথা বলা, আক্বীদা রাখা, প্রচার করা কুফরী হবে। কারন এসকল রেওয়ায়েতের হাক্বীকত সম্পূর্ণ ভিন্ন বরং এসকল
রেওয়ায়েত দ্বারাই ছোঁয়াচে রোগ আছে বিশ্বাস করার মাধ্যমে ঈমান হারানো থেকে বাঁচার পথ
দেখানো হয়েছে।
দুর্বল ঈমানদারদের ঈমান রক্ষা:
যেমন, একটা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ
أَبِى هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ:
لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ.
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, রোগাগ্রস্থ উট যেন সুস্থ উটের সাথে না রাখা হয়।” (মুসলিম শরীফ
৫৯০৫)
বাহ্যিকভাবে এ বর্ণনা দেখে হয়তো মনে হবে ছোঁয়াচে রোগ না থাকলে সুস্থ উটকে অসুস্থ
উটের কাছ থেকে আলাদা রাখতে বলার কারন কি?
কারনও পরিষ্কার। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী।
এ শিরক ও কুফর থেকে বাঁচানোর জন্যই মূলত সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের কাছ থেকে আলাদা রাখতে
বলা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি তার সুস্থ পশুকে কোন রোগাক্রান্ত পশুর সাথে রাখলো এবং স্বভাবিক
প্রক্রিয়ায় সেখানকার কোন সুস্থ পশুও অসুস্থ হয়ে গেলো এমতাবস্থায় তার মনে যদি কোনভাবে
এ ধারণার উদ্রেক হয় যে, তার সুস্থ পশুকে সেই অসুস্থ পশুর সাথে রাখার কারণেই
সেই রোগ সংক্রামিত হয়েছে। তাহলে এ ধারনার কারনে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। সূতরাং ঈমানী
দুর্বতলার কারনে কেউ যাতে শিরক কুফর করে না বসে তাই সতর্কতামূলক পন্থা অবলম্বন করে
সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের থেকে আলাদা রাখতে বলা হয়েছে, ছোঁয়াচের কারনে নয়।
বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার সুনানুল কুবরা বায়হাকী শরীফে এ বিষয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার জন্য একটা
অধ্যায় কয়েম করেছেন এবং তার শিরোনাম দিয়েছেন,
باب:
لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ فَقَدْ يَجْعَلُ اللَّهُ تَعَالَى
بِمَشِيئَتِهِ مُخَالَطَتَهُ إِيَّاهُ سَبَبًا لِمَرَضِهِ
অধ্যায়: অসুস্থ উট সুস্থ উটের সাথে রাখবে না। যেহেতু কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার
ইচ্ছায় অসুস্থের সাথে সুস্থেকে রাখার পর (সুস্থ পশু) সেই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।”
(সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড ৩৫২ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারু কুতুব
আল ইলমিয়া , বৈরুত লেবানন)
এধরনের আক্রান্ত হওয়া ঈমানী পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত। তাই দূর্বল ঈমানের অধিকারীরা
যাতে সুস্থ পশুকে অসুস্থ পশুর সাথে রাখার কারনে ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়েছে এ আক্বীদা
পোষন না করতে পারে তাই সর্তকতামূলক অসুস্থ উট সুস্থ উটের সাথে রাখবে না এ হাদীছ শরীফ
এসেছে।
সূতরাং এ ক্ষেত্রে মুসলমান ঈমানদারমাত্রই এ আক্বীদা রাখতে হবে, অসুস্থ ব্যক্তি বা পশুর সংস্পর্শে আসার
কারনে তার সেই রোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রমণ হয়নি। বরং উক্ত রোগ মহান আল্লাহ পাক উনার
হুকুমেই হয়েছে বলে বিশ্বাস রাখতে হবে।
No comments